হলদিয়া আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক টিমে বহিষ্কৃত আবু- মাবু, তৃণমূলে অসন্তোষ

কক্সবাজার প্রতিনিধি •

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও সদস্য সচিব করা হয়েছে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত নৌকা বিরোধী মাহাবুবুর রহমান মাবু ও আবুল কালাম শিকদার আবুকে। এছাড়া টিমের উপপ্রধান করা হয়েছে আরেক নৌকা বিরোধী মোর্শেদুর রহমান চৌধুরী টিটুকে।

২০১০ সালের উপজেলা নির্বাচনে এই তিন নেতা সরাসরি আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধীতা করে জামায়াত প্রার্থী শাহ জালাল চৌধুরীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট করেছিলেন। সে সময় মাহবুবুর রহমান ও আবুল কালাম শিকদার আবুকে আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন সভাপতি ও সহসভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও নৌকার প্রকাশ্য বিরোধীতা করেন মাবু, আবু ও টিটু। এই ৩ জনই শেখ হাসিনা মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলমের বিরুদ্ধে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট করেছেন।

আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত, নৌকা বিরোধী মাহবুবুর রহমানকে সম্প্রতি ঘোষিত হলদিয়া পালং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান করা হয়েছে। একই কমিটিতে নৌকা বিরোধী আবু শিকদারকে সদস্য সচিব ও টিটুকে উপ টিম লিডার করা হয়েছে।

এই কমিটি ঘোষণার পর থেকে হলদিয়াসহ পুরো উখিয়া আওয়ামীলীগ পরিবারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূল আওয়ামীলীগে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ।

হলদিয়া আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবী, মাহবুবুল আলম চৌধুরী উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী শাহ জালাল চৌধুরীর পক্ষে ভোট করার অভিযোগে ২০১০ সালে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। হারিয়ে ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির পদও। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে তিনি আওয়ামীলীগের কোন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। এর পর গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তিনি সরাসরি নৌকার বিরোধীতা করেছেন। এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট করেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর একাধিক জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন। যার অসংখ্য ভিডিও সংরক্ষিত আছে।

এদিকে সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব পেয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নৌকা বিরোধী মাবু-আবুসহ বিদ্রোহী সিন্ডিকেট। প্রতিশোধ নিচ্ছে নৌকার পক্ষাবলম্বন কারীদের উপর!

তাদেরকে নানা কায়দা কৌশলে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কাউন্সিল লিষ্ট থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। হলদিয়া ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তালিকা থেকে আওয়ামীলীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিএনপি জামায়াত মতাদর্শের লোকজনকে কাউন্সিলর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নৌকা বিরোধীদের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক করতে সাংগঠনিক টিমের নেতারা পর্যন্ত জাল ভোট দিয়েছেন। একইভাবে অন্যান্য ওয়ার্ডের চিত্রও একই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ এর ১১ বলা হয়েছে, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেহ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হইলে দল হইতে সরাসরি বহিষ্কার হইবেন এবং যাহারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করিবেন, তাহারা তদন্তসাপেক্ষ মূল দল বা সহযোগী সংগঠন হইতে বহিষ্কৃত হইবেন।
অথচ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতাকে ম্যানেজ করে হলদিয়ায় সংগঠন বিরোধী কার্যক্রম চলছে।

হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, যারা নৌকার বিরোধীতা করে সরাসরি বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোট করেছেন, তারা ই এখন আওয়ামীলীগের মিটিংয়ে আগের সারিতে বসে থাকেন। জেলার নেতারাও তাদের নানাভাবে সুবিধা দিচ্ছেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অভিযোগ করলেও নেতারা তা আমলে নিচ্ছেন না। এতে করে অবহেলিত হচ্ছেন ত্যাগী নেতারা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উখিয়া- টেকনাফের সাংগঠনিক টিমের প্রধান রাজা শাহ আলম চৌধুরী বলেন, শুধ বিদ্রোহী প্রার্থীদের কোনভাবে আওয়ামীলীগের কার্যক্রেম সাথে না রাখার বা দলের দায়িত্ব না রাখার নির্দেশ না রয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী পক্ষে ভোট করা নেতাদের ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ নাই।

কিন্তু গঠনতন্ত্রে উল্লেখমতে, যাহারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করিবেন, তাহারা মূল দল বা সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হইবেন, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।

এক পর্যায়ে বলেন, উখিয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী মূলতো মাহবুবুল আলম চৌধুরীকে হলদিয়ার টিম লিডার বানিয়েছে। ওনাদেরই সাক্ষরে তিনি টিম লিডার হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, বিগত নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু ওনার ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামীলীগের। তাছাড়া শুধু মাত্র বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে ই কাউন্সিলর বা দলীয় পদ-পদবী না করার জন্য দলীয় নির্দেশনা রয়েছে।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে ভোট করা নেতাদের বিষয়ে দলীয় কোন নির্দেশনা নাই। এরপরও যদি জেলা আওয়ামীলীগ মনে করে মাহবুবুল আলম চৌধুরী বির্তকিত তাহলে তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।